আমাদের বাংলাদেশে এখন
অনলাইনে ইনকামের জোয়ার শুরু হয়ে গেছে। মনে করছে অনলাইনে ঢু মারলেই টাকা আর টাকা।
বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে দেখা যায় মাসে ১০/২০ টাকা ইনকাম করুন ঘরে বসে। বিজ্ঞাপন দেখে
মনে হয় টাকা বাতাসে উড়ছে, শুধু দরকার হাত বাড়ানো। আমি নিজে কোন ফ্রি-ল্যান্সার
না। কিন্ত অনেক সফল ফ্রি-ল্যান্সার এর সাথে আমার পরিচয়। তাদের সাথে এমনই
ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে, তাদের হাড়ির খবর পর্যন্ত আমি জানি। তারা বছরের পর বছর কঠোর
পরিশ্রম করে সফল হয়েছেন। তাদের প্রথম আলাপেই বুঝতে পেরেছি অনলাইন ইকতাম অত সহজ না,
যত সহজ বিজ্ঞাপনে দেখা যায়।
আমার মতো নতুনদের জন্য
সতর্কবাণী: যারা
আমার মত নতুন তারা সস্তা বিজ্ঞাপন দেখে ঝাঁপিয়ে
পড়বেন না। সফল উদ্যোক্তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলন যারা সাফল্য অর্জন করেছে।
তাদের সাথে বন্ধুত্ব করুন, জেনে নিন তারা কিভাবে সফল হয়েছে। কোন অবস্থাতেই ক্লিক
করলেই ডলার, লাইক দিলেই ডলার ইত্যাদি মুখরোচক বিজ্ঞাপন কিংবা কথায় বিশ্বাস করবেন
না। কোন অবস্থাতেই ক্যাপচা (CAPTCHA) টাইপের মতো কাজে হাত
দেবেন না। এতে সময় এবং সুযোগ দুটোই নষ্ট হবে।অনুসারে ১০০০টি এরকম ক্যাপচা
সমাধান করার জন্য স্প্যামারেরা ফ্রিল্যান্সার এর মতো সাইটের মাধ্যমে মাত্র ৮০
সেন্ট হতে ১ ডলার (৮০ টাকা) দিয়ে থাকে, আর বাংলাদেশের প্রচুর তরুণ এই কাজে সময়
কাটাচ্ছে। গড়ে দেখা গেছে দিন রাত পরিশ্রম করে মাসে ৫/৬ শত
টাকা ইনকাম করতে পারছেনা। এমনকি মাসিক নেট বিল পর্যন্ত উঠে আসেনা। অনেক
দুষ্কৃতিকারী বিজ্ঞাপন দিয়ে ২০/৩০ জনের গ্রুপ করে ক্যাপসা টাইপ করায়। কিন্তু
বেশিরভাগই ১০/১৫ দিনের বেশি কাজ করেনাভ এতে লাভ হয় ঐ দুষ্কৃতিকারীর। তাই ভূলেও
ক্যাপসা টাইপ করার মতো কাজে হাত দেবেন না।
আরেকটি প্রতারনা হচ্চে
ফেইসবুকে লাইকের ব্যবসা। সামান্য
কিছু টাকার জন্য যে অঢেল সময় ক্লিক করে তরুণ ছাত্রদের সময় ও সুযোগ নষ্ট
করছে। যে সময় দিয়ে তারা লাইক কিংবা ক্যাপসার
পেছনে খরচ করছে তা দিয়ে আসল আউটসোর্সিং এর কাজ যেমন ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিকাল ডিজাইন, ই- মার্কেটিং, ইউটিউব এসব
শিখলে অনেক সাফল্য অর্জন করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
ফ্রিল্যান্স্যার হওয়ার
জন্য কি ধরনের প্রস্তুতি দরকার --
১। অনলাইন
ফ্রিল্যান্সিং কাজে অভিজ্ঞ হতে হলে কম্পিউটারটি
অবশ্যই লাগবে, সাথে গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট কানেকশন। তবে তেমন কোন উচ্চতর ডিগ্রী
লাগবেনা।
২। কাজ
শুরু করার সময় ইনকামের আশা করতে পারবে না। তাই বলে অধৈর্য্য হওয়া যাবেনা। কেননা
একটা সময় টাকা আপনাকে খুজবে।
৩। ফ্রিল্যান্সার
হতে হলে আপনাকে আগে বিভিন্ন সফটওয়্যার, টুলস্ সম্পর্কে জানতে হবে
এবং অভিজ্ঞদের সাহায্য নিতে হবে।
৪।
আপনাকে প্রথমে কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ বেশি বা কিছুটা হলেও অভিজ্ঞতা রয়েছে কিংবা
আপনার কোন বিষয়টা সহজ মনে হয় তাই নির্বাচন করুন। ঘন ঘন বিষয় পরিবর্তন করলে সারা
জীবনই চলে যাবে কিছুই শিখতে পারবেন না। তাই আপনাকে যে কোন একটি বিষয়ে পারদর্শি
হতে হবে।
৫। আপনি
বিষয় নির্বাচন করার আগে একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, আপনি
ইংরেজীতে কতটুকু দক্ষ। যদি আপনি ইংরেজি বিষয়ে মোটামুটি দক্ষ হন তাহলে সেই রিলেটেড
বিষয় নির্বাচন করুন। আর যদি ইংরেজি বিষয়ে বেশি দক্ষতা না থাকে তাহলে হাল ছাড়ার
দরকার নেই। অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন।
৬। আপনি
আগে কয়েকটি বিষয় নির্বাচন করুন, যেমন- অনলাইন মার্কেটিং,
ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন আরো অনেক বিষয় আছে সেগুলো অনলাইনে চার্জ দিয়ে বার
বার পড়ুন। যে বিষয়টা আপনার কাছে সহজ মনে হয় তা ইউ-টিউবে চার্জ দিয়ে ভালভাবে স্টাডি
করুন এবং নোট করুন, চর্চা করুন সফল ফ্রিল্যান্সারের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তারা
আপনাকে সাহায্য করবে।
৭। আপনি
একটা প্রোফাইল তৈরী করুন। প্রোফাইলে আপনার অভিজ্ঞতা, কাজের
নৈপুন্যতা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ব্লগ, এফবি তে শেয়ার করুন। এতে
আপনার পরিচিতি বাড়বে।
শেষ কথা -
আপনি যে বিষয়টি নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং
করতে চান, সে
বিষয়ে আপনাকে একজন দক্ষ বিশেষজ্ঞ হতে হবে। আপনি যত
বেশি দক্ষ হন তত আপনাকে কাজ পেতে সুবিধা হবে। যেহেতু
বেশিরভাগ ক্লায়েন্টই ইংরেজি ভাষাভাষি তাই তাদের
সাথে যোগাযোগের জন্যে ইংরেজি ভাষাটা রপ্ত করতে হবে। মনে
রাখতে হবে যত বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন তত বেশি কাজ পেতে সুবিধা হবে। আপনাদের
সহযোগিত পেলে আগামীতে বিভিন্ন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদে সাথে পরিচয় করিয়ে দেব এবং
তাদের বিভিন্ন বিষয়ের টিউটোরিয়াল নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো।
0 comments:
Post a Comment