ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে ১৩ টি কার্যকরী পদক্ষেপ
ডায়াবেটিস কি? – ডায়াবেটিস একটি জটিল অবস্থা যা পুরো শরীরকে প্রভাবিত করতে পারে। বাংলাতে এটিকে বলা হয় বহুমুত্র। ডায়াবেটিস প্রতিদিনের যত্নের প্রয়োজন হয় এবং যদি জটিলতার বিকাশ হয়, ডায়াবেটিস জীবনের গুণমানের উপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে এবং জীবন প্রত্যাশা কমাতে পারে। যদিও বর্তমানে ডায়াবেটিস কোন প্রতিকার নেই, আমরা ডায়াবেটিক সম্পর্কে জানতে এবং কার্যকরভাবে জীবন পরিচালনার মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ্য করে তোলা যায়।
ডায়াবেটিস কীভাবে শরীরকে প্রভাবিত করে?
যখন শরীরে ডায়াবেটিস ডানা বাধে তখন শরীরের রক্তে গ্লুকোজের সুস্থ স্তর বজায় রাখা যায় না। গ্লুকোজ আমাদের শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। রক্তে গ্লুকোজের অতি মাত্রায় বেড়ে গেলে দীর্ঘমেয়াদী বা স্বল্পমেয়াদী স্বাস্থ্যের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
আমাদের শরীরের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য আমাদের গ্রহনকৃত খাদ্য থেকে শর্করা (চিনি) শক্তিতে রূপান্তর করে। ইনসুলিন নামক হরমোনটি গ্লুকোজকে শক্তিতে পরিণত করার জন্য অপরিহার্য। ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের শরীরে ইনসুলিন পর্যাপ্ত পরিমাণে উত্পাদিত হয় না। এতে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ যা খায়, যেমন রুটি, সিরিয়াল, ফল এবং স্টার্কি সবজি, legumes, দুধ, দই এবং মিষ্টি তখন এটি শক্তি হিসাবে রূপান্তর হয় না। দু:খের বিষয় আমাদের যা খাই তা শক্তির পরিবর্তে মানব শরীরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে দেয়।
ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ০৩ টি গ্রুপে ভাগ করা হয় -
তিনটি প্রধান ধরনের ডায়াবেটিস রয়েছে: টাইপ 1, টাইপ ২ এবং গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস আক্রান্তদের কি ধরনের সমস্যা হতে পারে-
ডায়াবেটিস আক্রান্তরা সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ না নিলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, অঙ্গ বিক্লাংগ, বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং অন্ধত্ব সহ টাইপ 1 এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য সম্ভাব্য জটিলতাও একই ধরনের হতে পারে।
ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রনের ১৩ টি কার্যকর পন্থা -
যেহেতু
এখনও পর্যন্ত ডায়াবেটিসের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিত্সা আবিষ্কার হয় নাই তাই প্রতিরোধই
একমাত্র উপায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষজ্ঞগণ নানারকম পরামর্শ দিয়ে
থাকেন। ডায়াবেটিক বিষয়ে আমেরিকার আর এসব
উপায় নিয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিন।
১. খাওয়ার
৩০ মিনিট আগে প্রচুর পরিমান পানি পান করতে হবে। এতে ক্ষুদার তীব্রতা কমবে।
২. কম খাওয়ার অভ্যস্থ করার জন্য চা-চামচ, স্যালাড ফর্কস এবং ছুরি ব্যবহার করুন।
৩. দোকানে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় খাদ্যের একটি তালিকা তৈরি করুন।
৪. ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণের জন্য একাগ্রতা ও যথেষ্ট সদিচ্ছা থাকতে হবে।
৫.
ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগার সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। যেমন: টাইপ-১ বা টাইপ-২
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিনা তা না বুঝলে কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ করে ভালভাবে
জেনে নিতে হবে।
৬.
প্রতিদিন অন্তত ১০-৩০ মিনিট করে হাটার অভ্যাস করতে হবে। ভাত খাবার সময় অন্তত ১
টেবিল চামচ পরিমাণের রাইস কম খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়া রক্তের সুগারের পরিমাপ
রেকর্ড রাখুন।
৭. হিমোগ্লবিন
এওয়ানসি (HbA1c) কত রাখা বাঞ্চনিয় তা নির্ধারণের একটি লক্ষ্য থাকতে হবে। ব্লাড
সুগার কত মাত্রার মধ্যে রাখতে চান তা নির্ধারত করতে হবে
৮. ডায়াবেটিস চিকিত্সার একটি প্রধান
লক্ষ্য হল একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য পরিসীমা মধ্যে রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা রাখা। আপনার
কার্যকলাপ, লাইফস্টাইল এবং ডায়াবেটিসের ওষুধের সাথে আপনার খাবারের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রন করতে হবে। ব্লাড সুগার মনিটর করার মাধ্যমে আপনার খাদ্য
গ্রহণের পরিমাণ সমন্বয় করতে হবে।
৯. রক্তের
সুগার কমে গেলে দ্রুত চিনি জাতীয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে সুগার ঠিক করতে হবে। অন্যথা
জটিলতা তৈরি হতে পারে।
১০. যে ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন নিতে হয় তাদের এ্যারোবিক ব্যায়াম, অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য প্রতি সপ্তাহে ৪ থেকে ৭ বার, ব্যায়াম করা উচিত। উদাহরণ দ্রুত গতিতে হাটা, সাঁতার কাটা, সাইকিং এবং নাচ
এতে শরীরে ইনসুলিন ভালো কাজ করে।
১১.
ডাক্তারের কাছে যাবার আগে কি খাবার খাচ্ছেন, ব্লাড সুগারের পরিমান, ব্লাড প্রেসার
এবং কোন হাইপো হচ্ছে কি না ইত্যাদির একটি তথ্য সাথে নিন।উক্ত তথ্যাদি ডাক্তারের
কাছে যাওয়ার কমপক্ষে ৩/৪ দিন আগে থেকে হতে হবে।
১২.
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রক্তের HbA1c কমিয়ে
আনতে হবে এবং এটা যদি ১ মাত্রা কমাতে পারেন তবে চোখের সমস্যা ২১ ভাগ কমবে, কিডনি
সমস্যা ৩৩ ভাগ কমিয়ে রাখা যাবে। আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিনিয়োগ করুন যা আপনার
ভবিষ্যতে কাজে আসবে।
১৩. ডায়াবেটিস জটিলতার জন্য বছরে কমপক্ষে ০১ বার ডাক্তারের কাছে গিয়ে পুল চেকআপ করাতে হবে। ডাক্তারের সাথে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করতে ভুলবেন না, আপনি কেমন অনুভব করছেন। বার্ষিক চেকআপে চোখ, ফুট, সঞ্চালন, খাদ্য, ওজন, নিউরোপ্যাটি, হার্ট, রক্তচাপ, থাইরয়েড, ইলেক্ট্রোলাইট, কলেস্টেরল, রক্ত ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।
চলবে----------
0 comments:
Post a Comment