তিত করলার উপকারীতা
বছরের ১২ মাসই তিত করলার ফলন হয় এবং
বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। আগে তেতোর ভয়ে অনেকে এই জনপ্রিয় সবজিটি অনেকেই খেত না।
তিতা হলেও এই তেতো করলা স্বাধেও অতুলনীয়। কিন্তু ইদানিং বহুগুনে ভরপুর এই তেতো
করলা সবজি হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই সবজি ভাজি, ভর্তা বা ঝোলে রান্না করা
যায়। তবে স্বাদের চেয়ে এই
তেতো করলা ঔষধি গুনের জন্য
সবার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তিত করলা যে কত খানি উপকারী তা বলে শেষ করা
যাবে না।
করলা পরিচিত: তিক্ততার জন্য একে তিত করলা বলে। ইংরেজিতে Bitter gourd, Bitter melon ও Bitter squash নামে পরিচিত।
যেগুলো
অপেক্ষাকৃত ছোট, গোলাকার, বেশি তিতা,
সেগুলোকে বলা হয় উচ্ছে। আর বড় জাতেরগুলোকে করলা হিসাবে পরিচিত। সাধারণত হাল্কা অথবা গাঢ় সবুজ বর্ণের
হয়। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অঞ্চল, এশিয়া, আফ্রিকার কিছু অঞ্চল এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে উন্নতমানের করলা পাওয়া যায়।
করলায় কি
পরিমান খাদ্যপ্রাণ রয়েছে ? প্রতি ১০০
গ্রাম করলায় রয়েছে খাদ্যশক্তি ১৭ কিলোক্যালরি, প্রোটিন ১ গ্রাম, ফাইবার ২.৮০ গ্রাম,সোডিয়াম ৫ মিলিগ্রাম, ফোলেট ৭২ মাইক্রো গ্রাম,
নিয়াসিন ০.৪০০ মিলিগ্রাম,কার্বোহাইড্রেটস
৩.৭০ গ্রাম, ভিটামিন এ ৪৭১ আইইউ, ভিটামিন সি ৮৪ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ২৯৬
মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৭ মিলিগ্রাম।
এখন জেনে নিই করলার ঔষধি
গুন :
ওজন কমাতে তিত করলা : ১০০
গ্রাম করলায় ক্যালরি ১৭ এবং পানির পরিমাণ ৮০-৮৫%। যার কারনে আমাদের ওজন ও স্থুলতা কমাতে মহৌষধ হিসাবে কাজ করে। করলার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মানব
দেহের অপ্রয়োজনীয় পদার্থ নিষ্কাশন করে পরিপাক ও বিপাককে
শক্তিশালী করে এবং ওজন কমাতে
সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করে। তাই করলাকে বলা হয় মানব শরীরের এন্টিবায়োটিক।
ইনফেকশন এর প্রতিশেধক ও
এলার্জি নাশক : তিত করলার
ভিটামিন সি শরীরের রোগ
প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও যে কোনো ইনফেক্শন থেকে রক্ষা করে। তাই ইনফেক্শন থেকে রক্ষা পরিত্রান পেতে প্রতিদিন করলা পাতা বা করলার রস পানি মিশিয়ে খেলে প্রচুর
উপকার পাওয়া যায়। এই
রস ক্রিমি বিনাস করে এলার্জি সমস্যা সমাধান করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে তিত করলা :
আমরা সবসময় শুনে থাকি, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তিত করলা ও
তিতাজাতীয় খাবার উপকার হবে। তাই অনেকে নিমপাতা, মেহেদী পাতার রস/বড়ি, তিত করলার রস খান। এর বৈজ্ঞানিক বা চিকিৎসা শাস্ত্রে কোন ভিত্তি না
থাকলেও আমরা খেয়ে যাচ্ছি। তবে খাবারের তিক্ততা আমাদের অগ্ন্যাশয়কে উদ্দীপ্ত করে
বিধায় অগ্ন্যাশয় থেকে প্রচুর পরিমান ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। প্রাচীন কাল থেকে ভারতীয় ও চৈনিক চিকিৎসাশাস্ত্র মতে
ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে করলার
ব্যবহার লক্ষণীয়। রক্তে অপর্যাপ্ত ইনসুলিন নিঃসরিত হলে অথবা ইনসুলিনের কাজ কোনো
কারণে বাধাপ্রাপ্ত হলে আমাদের কোষে চিনির শোষণে ব্যাঘাত ঘটে ও ডায়াবেটিস দেখা দেয়। করলার বিশেষ তিনটি উপাদান, যথা-
charantin,
vicine, polypeptide-p রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে চিনির মাত্রা
হ্রাস করে। করলা এডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ নামক
এনজাইম বা আমিষ বৃদ্ধি করে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোর সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা
বাড়িয়ে দেয়। শরীরের কোষের ভিতর গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়াও বাড়িয়ে দেয়। ফলে
রক্তের সুগার কমে যায়।
তিতা করলার অপকারিতা :
প্রত্যেক খাবারের ভাল ও খারাপ দিক
দু’টোই থাকে, তেমনি তিতা করলারও ভাল দিক যেমন আছে তেমনি অতি সামান্য খারাপ দিকও আছে।
তবে খারাপের দিক কম।
১। কম বয়সী বা শিশুদের তিত করলা অল্প পরিমানে
খাওয়াবেন। অতিরিক্ত খেলে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
২। গর্ভবতী
মহিলাদর অধিক পরিমান খাওয়া যাবে না। কারন এতে মহিলাদের মাসিক প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে
গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। তাই গর্ভবতী মহিলারা না খাওয়ায় বাঞ্চনিয়।
৪। শিশুদের না খাওয়ানোই ভাল কেননা এতে শিশুদের বমি ভাব, পেট ফাপাসহ পেটের
বিভিন্ন পীড়ায় আক্রান্ত হতে পারে ।
0 comments:
Post a Comment